অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়
বাংলার মেয়ে তিলোত্তমা এক দাবানল
অভিজিৎ মুখোপাধ্যায়
তিলোত্তমা মরিয়া প্রমাণ করিল সে মরে নাই । তিলোত্তমা তোমার মৃত্যু নেই, তুমি অমর । তুমি ছিলে মৃত্যুহীন এক দেবদূত । তুমি স্বমহিমায় বিরাজ করবে প্রত্যেকটি ভারতবাসীর অন্তরে । তুমি এক অসামান্যা অগ্নিস্ফুলিঙ্গ, দাবানল । হাসপাতালের কিছু নরখাদক মানুষের দ্বারা তুমি পৈশাচিক মৃত্যু বরণ করলেও জানবে সেই মৃত্যুই তোমাকে দিয়ে গেল অমরত্বের স্বাদ । বিগত পঁচিশ দিন যাবৎ জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা ৪ থেকে ৯০ বছরের বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা পর্যন্ত মোমবাতি হাতে তোমার উপর সুপরিকল্পিত ভাবে নৃশংস নির্মম হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন । পথে নেমে তাঁরা মিছিলে অংশগ্রহণ করছেন । স্বেচ্ছাচারী শাসকবর্গের বিরুদ্ধে মুষ্ঠিবদ্ধ উত্তোলিত হাত তুলে প্রতিবাদী ধিক্কার জানাচ্ছেন সমস্বরে । তাঁদের একটাই দাবী পশ্চিমবঙ্গের ‘মূর্খ’মন্ত্রীর অবিলম্বে পদত্যাগ । এ তোমার মরনোত্তর পুরস্কার ব্যাতীত আর কিছুই নয় । পৃথিবীর ইতিহাসে এমন দীর্ঘ এবং তীব্র জনরোষ এই প্রথম মানুষ চর্মচোখে দেখতে পেলেন । তোমার গভীর যন্ত্রনা কাতর চিৎকার হাসপাতাল কক্ষের বাইরে কেউ শুনতে না পেলেও আজ দিকে দিগন্তে ছড়িয়ে পড়েছে তোমার অস্ফুট নীরব চিৎকার । তিলোত্তমা তুমি নিশ্চিত জেনে রেখো তোমার সেদিনের দুঃখ – কষ্ট – বেদনা কখনো বিফলে যাবে না । আমরা উপযুক্ত বিচারের আশায় দিন গুনছি । অপরাধীর বিচার আমরা করেই ছাড়বো এরকম জঘন্য অপরাধ যেন বাংলার বুকে আর না সংঘঠিত হয় কখনো । তোমার জিত অবশ্যম্ভাবী ।
‘এ আগুণ বাড়বে দ্বিগুন লাগে যদি হাওয়া’ । হাওয়া সঞ্চারিত হবে কিভাবে সেটা না হয় বাংলার কনিষ্ঠতম বীর বিপ্লবী শহীদ ক্ষুদিরাম বসুর শ্রীমুখ থেকেই ধ্বনিত হোক ---
“লড়ো ,
না লড়তে পারলে বলো,
না বলতে পারলে লেখো,
না লিখতে পারলে সঙ্গ দাও,
না সঙ্গ দিতে পারলে যারা কাজ করছে,
তাঁদের মনোবল বাড়াও,
যদি তাও না পারো,
যে পেরেছে তার মনোবল কমিয়ো না
কারণ সে তোমার ভাগের লড়াই লড়ছে” ।
তোমার মৃত্যুর আগে এমন তর অপরাধ আরো হয়েছিল কিন্তু সব চাপা পড়ে গিয়েছিল । দোষ আমাদেরই । আমরা ঠিক সময়ে প্রতিবাদ করতে পারিনি । আপামর জনতা জেগে উঠলে কার সাধ্য নিরন্তর অন্যায় অবিচার করার সাহস পায় শাসক বর্গ ! আমরা তখন নির্বিবাদে ঘুমিয়ে ছিলাম । তারই ফলঃস্বরূপ তোমার মৃত্যু হয়েছে । সেদিন তোমার অনেক কথাই বলার ছিল, তুমি বলতে পারনি । অপরাধীরা তাঁদের কুকীর্তির কথা তোমাকে বলতে দেওয়ার সুযোগ না দিয়ে রাতের অন্ধকারে তোমাকে গোপনে হত্যা করেছিল । কিন্তু তিলোত্তমা তোমার অন্তর নিহিত জমানো ক্ষোভের কথা তুমি মুখ ফুটে বলতে না পারলেও তোমার মৃত্যুর এতদিন পরে সব ফাঁস হয়ে গিয়েছে । তোমার হত্যাকান্ডের প্রধান অপরাধী নরখাদক সন্দীপ ঘোষ নাকি তোমার মৃত্যুর পঁচিশ দিন পরে সি.বি.আই. –এর হাতে গ্রেফতার হয়ে হাউ হাউ করে অসহায় ভাবে কাঁদতে শুরু করেছে । এতদিনে বোধহয় অপকর্মে দরুণ তাঁর চৈতন্যের উদয় হয়েছে যার আরেক নাম বোধদয় । কিন্তু এখন শুধু কাঁদলেই হবে না, চোখ ফেটে যেদিন ফোঁটা ফোঁটা রক্ত ঝরবে সেইদিন আমরা হব শান্ত, ফাঁসি অবশ্যম্ভাবী । তাঁর সঙ্গে জড়িত পরোক্ষ এবং অপরোক্ষ সকল অপরাধীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবি জানাই ।

পাঠকের মতামতঃ